Wednesday, April 5, 2017

মাশরাফির অবসরের পিছনে মূল ঘটনা ! বাধ্য করা হয়েছে তাকে অবসর নিতে !



















বিশ্ববাসীর কাছে মাশরাফি এক অনুপ্রেরণার নাম,সাহস ও আস্থার নাম । দৃঢ় প্রত্যয়,ত্যাগ ও সততার মূর্ত প্রতীক আমাদের মাশরাফি বিন মর্ত্তোজা । তিনি বর্তমান বাংলাদেশ জাতীয় টি২০ ও ওয়ানডে ক্রিকেট দলের নিয়মিত অধিনায়ক । তিনি সরল পথের মানুষ । 
[এই খবরটি ইংরেজীতে পড়ুুুন ]
বেশ কিছু দিন ধরে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিলো তার অবসর নিয়ে । এই গুঞ্জনের শুরু আইসিসি ওয়ার্লড টি২০ ইন্ডিয়া ২০১৬ থেকে । মিডিয়াতে বলা হচ্ছিলো এটিই তার শেষ বিশ্বকাপ । অথচ মাশরাফি তখন বলেছিলেন যে উনি তখনো সেরকম কিছু ভেবেছিলেন না বা পরিকল্পনা করেছিলেন না এ বিষয়ে । তারপর এ নিয়ে কিছুদিন কথা-বার্তা বন্ধ থাকার পর শুরু হয় দলের হেড কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহের একচ্ছত্র অধিপত্য । তিনি দল নির্বাচন করবেন,একাদশ তার ইচ্ছা মতো হবে,নেটের অনুশীলন দেখেই কাউকে বিশ্বকাপে অভিষেক করাবেন,ভালো ফলাফল থাকলেও যাকে ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দ তাকে একাদশের বাহিরে রাখা ইত্যাদি  তার অধিপত্যের উদাহরণ । এর বাইরেও আছে অনেক কিছু । এসবের কারণে পদত্যাগ করলেন সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুখ আহমেদ । কিন্তু এসবের জন্য তো দ্বিস্তর বিশিষ্ট নির্বাচক কমিটি আছে ।  থাকলেও হাথুরুসিংহের বিরোধিতা করার সাহস কারোর নেই ! উনারা শুধু নামে মাত্র নির্বাচক মন্ডলী হিসেবে আছেন । ঠিক যেমন বাংলার ইতিহাস থেকে জানা যায়,মীর কাসিম নামে মাত্র নবাব ছিলেন !
দলের মধ্যে তার ইচ্ছা বজায় রাখতে কিছুটা অসুবিধা হয়,অনেক সময় বাস্তবায়নও হয় না সিনিয়র ক্রিকেটারদের উপস্থিতিতে । কারা সেই সিনিয়র ক্রিকেটার? সাকিব-মাশরাফি-তামিম । শুনে অবাক হওয়ার কিছু নেই ! সিনিয়র হিসেবে উনারা তিন জন দলের মঙ্গলের জন্য বাজে চিন্তা-ভাবনা,বাজে সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে বিরত থাকবেন সেটাই স্বাভাবিক । তবে এটা সত্য যে কোচ হিসেবে চন্দিকা হাথুরুসিংহের কার্যক্রমে কোন সংশয় বা ত্রুটি নেই ! তিনি খুব উচ্চ মাপের কোচ এবং বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে সফলতম কোচ । তাই বলে তার অযাচিত সিদ্ধান্ত এভাবে মেনে নেয়া যায়? সমর্থক হিসেবে আপনি এসব মেনে নিবেন? চিন্তা করুন সিনিয়র দের কথা । উনারা এসব মেনে নিবেন? অবশ্যই না ! আর যদি বলি মাশরাফির কথা?  উনি সরল পথের মানুষ । উনি চোখ বুঝে এসব অন্যায়,অনিয়ম সহ্য করতে পারেন না ।
চলুন একটু ফ্ল্যাশব্যাকে যাই । ১৪ই নভেম্বর,২০১৬, রোজ সোমবার । মিরপুরে বিপিএলের তৃতীয় আসরে অধিনাযক সাকিব আল হাসানের ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্ত্তোজার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ম্যাচ সন্ধ্যা সাতটায় । এর আগের তিন ম্যাচে কোন জয় পায়নি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স । এজন্য রবিবারে একাদশ নির্বাচন নিয়ে দলের ফ্র্যাঞ্চাইজি আর অধিনায়কের মধ্যে দ্বন্দ্ব খুব ভালো ভাবেই লেগেছে । ফলে রাগ-ক্ষোভে  রবিবার দিবাগত রাত একটায় টিম হোটেল থেকে বাসায় চলে গিয়েছিলেন মাশরাফি । কারণ,তিনি চান না কোন চাপিয়ে দেয়া দল নিয়ে খেলতে । তার কাছে যোগ্য খেলোয়াড় পাকিস্তানি পেসার সোহেল তানভিরকে একাদশের বাইরে রাখতে চেয়েছিলো টিম ম্যানেজমেন্ট । অধিনায়কের সিদ্ধান্তের বাইরে কাজ করছিলো ফ্র্যাঞ্চাইজি ও টিম ম্যানেজমেন্ট । পরে অবশ্য তিনি এর জন্য ক্ষমা চেয়েছেন । কিন্তু তিনি বলেছিলেন যে এরকম অবস্থায় কীভাবে খেলতেন?
তাহলে দেখুন বিপিএলে অনিয়মের কারণে তিনি খেলা বর্জন করেছিলেন । আর প্রাণ প্রিয় বাংলাদেশ বলে কথা যখন,তখন তিনি চোখ বুঁজে এসব অন্যায় সহ্য করতে যাবেন কেন ?
মাশরাফি  ; টেষ্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের উইকেট কিপিংয়ের পক্ষে ছিলেন । কিন্তু বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও হেড কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহে ছিলেন এর বিপক্ষে । মাশরাফির সাথে ছিলেন সাকিব-তামিমরাও । এতে করে কোচ তার ইচ্ছা অনুযায়ী চলতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছিলেন । কিন্তু শ্রীলংকার বিপক্ষে ১০০তম টেষ্টে লিটন দাশের ইনজুরিতে ঠিকই তিনি কিপিং করেছেন এবং ভবিষ্যৎতেও করবেন । লিটন দাশের কিপিং এর আগের ম্যাচ গুলোতে তিনি কোচের অমতে এবং সিনিয়রদের সমর্থনে এক প্রকার জোর করেই কিপিং করেছেন বলা যায় । তারপর দেখুন নিউজিল্যান্ড সিরিজের সময় বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন গণমাধ্যমকে বলেছিলেন দেশে এসে মাশরাফি টি২০ থেকে অবসর নিবে । এ বিষয়ে নিউজিল্যান্ডে অবস্থানরত সময়েই মাশরাফিকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন যে তিনি এসব কিছু বলেন নি ও তিনি এসব কিছু জানতেন না । অন্যদিকে চলমান শ্রীলংকা সফরে টেষ্ট সিরিজ শেষে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছিলো মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে । কোচ হাথুরুসিংহে নিজে গিয়ে তাকে দেশে ফিরে যেতে বলেছিলেন । এর বিরুদ্ধে ছিলো নির্বাচক কমিটির সবাই । কিন্তু কোচেই বিরুদ্ধে যাওয়ার দুঃসাহস উনাদের নেই ! তাহলে আছে কার? তিনি বাংলার বীর মাশরাফি বিন মর্ত্তোজা ! তিনি এ খবর শোনার পর বলে দিলেন যে মাহমুদুল্লাহকে দেশে পাঠানো হলে তিনি শ্রীলংকাতেই যেতেন না! তাই বাধ্য হয়ে ওয়ানডে স্কোয়াডের ১৬তম সদস্য হিসেবে মাহমুদুল্লাহকে রাখলেন কোচ । অারেকটু লক্ষ্য করলে দেখা যায়,নিউজিল্যান্ড সিরিজে গুরুতর ইনজুরি হওয়া ইমরুল কায়েসের ফেরার ম্যাচে ফিজিও বলেছিলেন ইমরুল শুধু ব্যাটিং করতে পারবেন । কিন্তু ফিল্ডিং করা তার জন্য খুব রিস্কি বিষয় । ফলে আবার সে ইনজুরিতে পড়তে পারে এবং এর সম্ভাবনাও আছে ভালোই ।  তাই তাকে যেন ফিল্ডিং না করানো হয় । কিন্তু কোচ তাকে ঠিকই ফিল্ডিং করাতে পাঠিয়ে দিলেন ! নিউজিল্যান্ডের কাছে ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ,শ্রীলংকায় ওয়ানডে ও টি২০ তে হার । মিরপুরে ইংল্যান্ডের হাছে সিরিজ হার । ভারতে টি২০ বিশ্বকাপের মূল পর্বে হার । বাংলাদেশের বোলিং নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলা যায় । অপরিকল্পিত-এলোমেলো মনে হচ্ছে। এর পিছনে কী কারণ ? গেম প্ল্যান যখন সাজানো হয় তখন মাশরাফির বিরোধীতা করেন হেড কোচ । পরিকল্পিত ভাবে তার সিদ্ধান্তে অমত পোষন করেন কোচ । তিনি যে একাদশ নিয়ে খেলতে চান সেটা দেন না তাকে । একজন অধিনায়ক তো চাইতেই পারেন যে একাদশে অমুক খেলোয়াড়কে দিয়ে এটা করাবেন তিনি । ইনফর্ম নাসির হোসেন,মমিনুল হক,এনামুল হক বিজয়ের মতো খেলোয়াড়দের দলে সুযোগ দেন না তিনি । অথচ নেট থেকে দেখে দলে সুযোগ দেন তানভীর হায়দারকে ! ফার্স্ট ক্লাস ও জাতীয় লীগে কোন ভালো ফলাফল না থাকা মিথুন আলীকে তিনি অভিষেক করান এশিয়া কাপের মতো টূর্ণামেন্টে ও তাকে রাখেন টি২০ বিশ্বকাপেও !  এই দুই টূর্ণামেন্টে তার কোন ভালো ফলাফল নেই ।  এসব মানতে নারাজ ছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি ও সিনিয়ররা । আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ইস্যুতে লক্ষ্য করলে দেখা যায় তার অধিপত্য বিস্তারে কোনভাবেই সফল হচ্ছিলেন না মাশরাফির জন্য । হেড কোচ কিছুদিন আগে বিসিবি কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন যে তিনি মাশরাফি,তামিম ও মুশফিককে এখন টি২০তে প্রয়োজন মনে করছেন না । টি২০ সিরিজ শুরুর আগে তিনি তাদেরকে আবারো বিষয়টি নিয়ে মাশরাফির সাথে কথা বলতে বলেছেন । সোমবার রাতে নাজমুল হাসান চার সিনিয়রের সাথে বৈঠক করেছেন । বিসিবি এখন তিন ফরম্যাটের তিন অধিনায়ক চায় ।
কোচের জন্য মাশরাফি  একরকম পথের কাঁটা ! যদি মাশরাফিই না থাকে তাহলে তো এতসব সমস্যায় তাকে পড়তে হবে না । তিনি আর থেমে থাকবেন না ভাবলেন ।  তাই মাশরাফিকে তিনি জোর করে অবসর নেয়ালেন ! সঙ্গে একটি অজুহাত জুড়ে দিলেন যে তিনি তারুণ্য নির্ভর টি২০ টিম চান !!! কেন তারুণ্য নির্ভর টিম লাগবে? অস্ট্রেলিয়া,আফ্রিকা,ভারত কী তারুন্য নির্ভর টিম?এবিডি ভিলিয়ার্স,হাশিম আমলা,ডেল ষ্টেইন,ডেভিড ওয়ার্নার,মাইকেল ক্লার্ক,মিচেল স্টার্ক,পাকিস্তানের সোহেল তানভীর,ওয়াহাব রিয়াজ,ইংল্যান্ডের মঈন আলী,রবীচন্দ্রন অশ্বিন,ভিরাট কোহলি,রবীন্দ্র যাদেজা,শেখর ধাওয়ান এরা কী তরুন? এটা একটা অজুহাত ছাড়া আর কিছু নয় !  আর তার শরীরও আগের মতো সুস্থ নেই । কিন্তু শরীরের ব্যাপারটি মাশরাফির কাছে একেবারেই নগন্য । উনি এটা চিন্তা-ভাবনাতেই আনেন না । তারপরও কোচের এসব অন্যায় ও অধিপত্য বিস্তারের কার্যকলাপ দেখে মাশরাফি আর টিকে থাকবেন না এটাই স্বাভাবিক !
লক্ষ্য করুন,মাশরাফি শ্রীলংকায় ওয়ানডে সিরিজ শেষে টি২০ সিরিজ শুরুর প্রস্তুতির সময়ও অবসরের  কথা কিছু বলেন নি । তিনি জয়ের প্রত্যাশা করে কথা বলছিলেন। টিম স্পিরিটই তখন অন্যরকম ছিলো । হঠাৎ করে ১ম টি২০র শুরুর ঠিক ছয়-সাত ঘন্টা আগে অবসরের কথা কেন? ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেন । সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি বলেছিলেন যে নতুনদেরকে সুযোগ দেয়ার কথা তার মাথায় এসেছে ! আর তিনি সবকিছু আগে থেকে ভেবে করেন না । মনে হয়েছে অবসর নেয়ার কথা তাই নিচ্ছেন । আর সময় থাকতে এখন মনে হলো কেন টি২০ ম্যাচ শুরুর ঠিক ছয়-সাত ঘন্টা আগে? আর বয়স হয়েছে ইত্যাদি । এটা ঠিক বয়স হয়েছে । কিন্তু ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেলবেন কীভাবে ? আর বলেছেন যে এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই ।
এসব কথা তিনি বলেছেন আসল ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য ! আসলে এগুলো কিছুই না । আর সে সময় তার মুখের দিকে তাকালেই বোঝা যায় তিনি কিছু লুকাচ্ছেন। তার মন খুব খারাপ ছিলো তখন ।  আর গতকালকের ম্যাচে দলের সতীর্থরা তাকে অনেক বুঝিয়ে টস করতে পাঠিয়েছেন । এর অর্থ হলো,এটিই তার শেষ সিরিজ ! তাকে যতটুকু সম্মান দেয়ার কথা ছিলো তার বিন্দুমাত্র সম্মান তাকে দেয়া হয় নি । অথচ তিনি অনেক উচ্চ সম্মান প্রাপ্তির যোগ্য । ন্যূনতম সম্মানটুকুও কি তাকে দেয়া যেতো না ?
যাই হোক,এই আর্টিকেলের লেখক আমি তাহমিদ রাদ্বিত,আমার খুব ইচ্ছা ছিলো টি২০ ও ওয়ানডেতে শেষ ম্যাচে স্টেডিয়ামে গিয়ে সকল দর্শকদের সাথে আমিও বিদায় জানাবো তাকে  !  কিন্তু সেটা ইচ্ছাই থেকে গেলো  !
চিরজিবী হও মাশরাফি ! তোমার ঋণ আমরা কখনো শোধ করতে পারবো না। আমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়ো পারলে ! আমরা তোমাকে যোগ্য সম্মানটুকু দিতে পারিনি !

-মোহাম্মদ তাহমিদ রাদ্বিত

No comments:

Post a Comment